Amy Blankenship - সময়ের অন্তর стр 2.

Шрифт
Фон

শিনবে সুকির ঠিক সামনেই তার রক্ষাকবচের মতো দাঁড়িয়েছিল, হায়াকুহেইয়ের দৃষ্টি থেকে তাকে আড়াল করে। কোতারোর রোষানল থেকে উদ্ভুত বায়ু শিনবের মুখের উপর এসে পড়া তার মিশমিশে কালো চুল হাওয়া উড়াচ্ছিল... যা তার নীলকান্ত মণির মতো চোখে ভয়ার্ত এক অভিব্যক্তি তৈরি করেছিল। স্ফটিক ভবনের শক্তির অনুভূতি হওয়ামাত্র কিওকোর জন্য তার চিন্তা আরও তীব্র হয়ে উঠল।

সহসা তার মধ্যে থেকে বেরিয়ে যাওয়া কোন বায়ু যেন তার মুখ থেকে “না….” শব্দ বের করে এনেছিল। শিনবে এ কথা জানত যে, হায়াকুহেই যদি রক্ষকের অন্তর-স্ফটিকের সমস্ত শক্তি হস্তগত করে ফেলে, তাহলে দুই জগতের সামনেই সমূহ বিপদ উপস্থিত হয়ে পড়বে। আর এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে সে কিছুই করতে পারছিল না এই কথা ভেবে তার দু’চোখ বেয়ে অগ্নিরূপ অশ্রু প্রবাহিত হতে থাকল। “…কিওকো।”

হায়াকুহেই তার চারিপাশে এতক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে থাকা তার শত্রুদের দিকে তাকাল... তার নিজের ভাইয়ের পুত্রের দিকে তাকাল। ও জানত এরা সবাই ওকে আক্রমণ করতে ভয় পাচ্ছে কারণ এই মুহূর্তে কিওকো তার কজ্জায় রয়েছে তার ঢাল হিসেবে এবং সে তার চারিপাশে ক্ষোভের আগুনের লেলিহান শিখা অনুভব করতে পারছিল।

তার মিশকালো দুই পাখা প্রসারিত হল, যা তার পিছনে একটা অন্ধকার পটভূমি রচনা করল, আর সেই সঙ্গে তার ততধিক কালো দুই চোখ তার হাতে থাকা মেয়েটির উপর স্থির হয়ে রইল। "ওরা তোমাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে।" সে খুব শান্ত স্নিগ্ধ গলায় বলল। তার কথা এমন ছিল যেন তারা কেউ-ই এই যুদ্ধভূমিতে নেই, বরং তারা বাইরে থেকে তা দেখছে।

সে সেই পবিত্র রক্ষকের অন্তর-স্ফটিকের স্পর্শ অনুভব করতে পারছিল যেটা তখনও তার উন্মুক্ত ছাতির ঠিক মাঝখানে জ্বলজ্বল করছিল। কিওকোকে রক্ষার জন্য লড়াই করা রক্ষকদের প্রতি কিওকোর ভালবাসাই সেই একমাত্র জিনিস ছিল যা ওই স্ফটিকের অবশিষ্ট অংশটা হায়াকুহেইয়ের শরীরে পুরোপুরি বিলীন হয়ে যাচ্ছিল না, তাকে সেই শক্তির সুখ দিয়ে যা তার চির-আকাঙ্খার বিষয়।

কিওকোর সেই বিশুদ্ধ ভালবাসাই তার শক্তি, আর তাই দিয়েই সে হায়াকুহেইয়ের শরীর থেকে পবিত্র স্ফটিকটিকে টেনে বের করে আনার চেষ্টা করে যাচ্ছিল... হায়াকুহেই তা বেশ অনুভব করতে পারছিল। কিন্তু তার সাথে সাথে সে সেই শক্তিকেও অনুভব করছিল যা সেই মুহূর্তে তারা শিরা-ধমনীর মধ্যে দিয়ে বয়ে যাচ্ছিল, এবং যা তাকে আরও আরও পেতে প্ররোচিত করছিল।

হায়াকুহেইয়ের চোখ দুটো কয়েক মুহূর্তের জন্য নরম হয়ে গেল যখন কিওকোর সাথে ফিসফিস করে কথা বলছিল যেমন করে কোন প্রেমিক তার প্রেমিকার সঙ্গে বলে। “এটা যথেষ্ট নয়।”

হায়াকুকেই ঠিক করল যে সে এখনও অবধি ওই পবিত্র স্ফটিক থেকে যতটুকু শক্তি অর্জন করতে পেরেছে তাকেই কিওকোর বিরুদ্ধে কাজে লাগাবে এবং তার এই ভালবাসর বন্ধনকে ভেঙ্গে ফেলতে চেষ্টা করবে যা তার শরীরের চারিপাশ বেষ্টন করে রয়েছে। সে বুঝতে পেরেছিল যে, তাকে যে কোনভাবে হোক কিওকোকে নিরস্ত করতেই হবে... কারণ কিওকোর ভালবাসার শক্তি নিজের মধ্যেই সেই পবিত্র স্ফটিকের শক্তির সমকক্ষ যা এক সময় তার হাতেই ছিল। এ সেই স্ফটিক যাকে এক সময় ভালবাসার অধিকার তার ছিল... যতক্ষণ অবধি না সেই অধিকার নিষ্ঠুরভাবে তার হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল।

সে এক ঝটকায় কিওকোর মুখটা নিজের মুখের কাছে টেনে নিল এবং আলতো করে তার নিষ্পাপ ঠোঁটের উপর একটা চুম্বন করল। তার চঞ্চল সুবজ চোখে তাকিয়ে হায়াকুহেই রক্ষকের অন্তর-স্ফটিকের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে তার অন্তঃকরণে প্রবেশ করল।

হায়াকুহেই রক্ষকদের প্রতি তার স্নেহস্মৃতির খোঁজ করল যাদের কিওকো অত্যন্ত ভালবাসত... হায়াকুহেই ওর থেকে তা নিয়ে নেবে। সে যাদের জন্য লড়াই করত সেই সব মানুষগুলোর স্মৃতি কিওকোর থেকে চুরি করে নিলে কিওকোর শক্তি কমবে এবং সেই শক্তি হায়াকুহেইকে আরও শক্তি জোগাবে।

কিওকো তার চোখের পাতা ফেলতে পারছিল না। কিওকো তার মনের মধ্যে হায়াকুহেইয়ের অশুভ পাঞ্জার চলাফেলা অনুভব করতে পারছিল যা তার স্মৃতিকে নষ্ট করে দিতে চাইছিল এবং এই লড়াইয়ে তার সংকল্পকে খানখান করে দিতে চাইছিল... তার ভালবাসাকে তার থেকে আলাদা করে দিতে চাইছিল। তার বন্ধুরা, তাদের সকলেই, সে নিজেও এটা হতে দিতে পারে না।

কিওকো বুঝতে পারছিল সে তার নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে, তার কাছে শুধুমাত্র একটাই জিনিস থেকে যাচ্ছে হায়াকুহেইয়ের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য, আর সেটা হল সেই জিনিস যা হায়াকুহেই তার থেকে ছিনিয়ে নিতে এবং তাকে ধ্বংস করে দিতে চাইছিল। তার চোখে ক্রোধের আগুন আর চাপা দেওয়া যাচ্ছিল না। কিওকো হায়াকুহেইয়ের রেশমি, মিশকালো চুলের মধ্যে তার হাতি চালিয়ে দিয়ে তাকে প্রবলভাবে আঁকড়ে ধরল এবং তার কপালে নিজের কপাল সজোরে আঘাত করল, যা শক্তি এক তরঙ্গ তৈরি করল।

কিওকোর প্রবল চিৎকারে গোটা যুদ্ধক্ষেত্র ফেটে পড়ল। "এতটাই খারাপ হোক চেয়েছিলে তো? নাও তবে!! এই নাও!!!!"

কিওকোর সোনালি চোখ জ্বলজ্বল করে উঠল যা থেকে যেন একটা উত্তপ্ত ছুরির মতো ত্রাস ছিটকে বেরিয়ে হায়াকুহেইকে বিদ্ধ করছিল। ঋত্বিকা কী করছিলেন? হায়াকুহেই জানত কিছু একটা মারাত্মক ভুল হয়ে যাচ্ছে এবং তার ভিতর থেকে তার মানসিক শক্তি তাকে ডাকছিল... যেন তাকে শোনার জন্য এবং অনেক দেরি হয়ে যাবার আগে একবার দেকে নিতে আকুতি জানাচ্ছিল। সে সেই শক্তিকে গুটিয়ে এনে কিওকোর মনের ভিতরে প্রবেশ করেছিল, কী ঘটছে তা দেখার জন্য। তার ছায়া দৈত্যরা তাকে চারপাশ থেকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে না থাকলে... একেবারে স্থিরভাবে, সে যা দেখতে পেয়েছিল তাতে হায়াকুহেই নিজের হাঁটুতে ভর দিয়ে মাটিতে পড়ে যেত।

সেই ছবি ও আওয়াজগুলি চিরতরে তার মনের চোখে বসে যাবে এবং কিওকো কোনভাবে জানত যে, হায়াকুহেই সেই অনুভূতিগুলিকে নাড়াতে পারবেই না যেগুলি তার উপর দিয়ে বয়ে গেছিল। কারণ তার অন্তঃকরণের চোখে চোখ রেখে হায়াকুহেই বুঝতে পেরেছিল যে, কিওকোর অন্তরে তার জন্য ও তার ভাইদের জন্যও ভালবাসা রয়েছে। সেই প্রতিটি স্পর্শ, প্রতিটি আবেগঘন আদর দেখতে পাচ্ছিল এবং সেই প্রতিটি লুকানো ভালবাসার অশ্রু দেখতে পাচ্ছিল যা অবশ্যই কিওকোর মধ্যে তার জন্যই ছিল।

কিউ একেবারে ভিতর থেকে নড়ে উঠেছিল এই সময় কারণ সে জানতে কিওকোর মধ্যে যে কোন কারো থেকেই অনেক বেশি শক্তি রয়েছে... এমনকি তার মধ্যে এমনও শক্তি আছে যা কিওকোর নিজেরই অজানা। কিউ সেই প্রতিটি স্মৃতিকে দেখতে ও অনুভব করতে পারছিল যেগুলো কিওকোর মন থেকে বেরিয়ে হায়াকুহেইয়ের মনে প্রবেশ করছিল, যেন কোন তীর তার মনের মধ্যে ছুটে গিয়ে ঢুকে পড়ছিল যেখান থেকে সে আর সেগুলোকে কখনই বের করবে না।

বহু বছরের ভালবাসা, মর্মপীড়া এবং ত্যাগ... এক মুহূর্তেই সব চলে যাচ্ছে।

ক্রোধের আগুনে গলে যাওয়া অশ্রু কিওকোর গাল বেয়ে নামছিল আর সে প্রত্যেকের জন্য তার ভালবাস ও বন্ধুত্বের, যন্ত্রণার ও রহস্যের অনুভূতির স্মৃতিগুলোকে হায়াকুহেইয়ের মনের মধ্যে থেকে টেনে বের করে নিজের মনের মধ্যে ঢুকিয়ে দিচ্ছিল। তার হাতে এই শেষ অস্ত্র ছিল।

একেবারে সাথে সাথেই হায়াকুহেইয়ের অশুভ শক্তি অস্থিতিশীল হয়ে পড়ল। স্ফটিকটি অন্ধ আলো থেকে উজ্জ্বল সাদা আলোয় দপদপ করতে দেখে সকলেই শক্তির হাতবদল বুঝতে পারছিল, আর তখনই তয়া ও কিউকে আঁকড়ে ধরে থাকা অপচ্ছায়াগুলির মুষ্টি শিথিল হয়ে বায়ুর সঙ্গে মিলিয়ে যেতে থাকল।

কিওকো এখন অন্ধকারের দেবদূতকে বিভ্রান্ত অবস্থায় দেখতে পেল, তার ফ্যাকাসে মুখটা যন্ত্রণায় দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছিল।

ঠিক যে মুহূর্তে কিওকো বুঝতে পারল যে সে পিছলে বেরিয়ে আসছে তখনই সে ছোট-ছোট দুই বাহু প্রসারিত করল এবং স্ফটিকটিকে শক্ত করে ধরল এবং হায়াকুহেইয়ের মাংসপিণ্ডের মধ্যে থেকে টেনে বের করে নিল। কিওকো জানত কী করা উচিত, কারণ সে বেশ অনুভব করতে পারছিল যে সে তার মনে সেইসব স্মৃতিগুলোকে দ্রুত হারাচ্ছে যেগুলোকে সে হারাতে চাইত না। ইতিমধ্যে অশ্রুধারা বয়ে যাওয়ার চিহ্ন থাকা তার গাল বেয়ে স্ফটিকাকৃতির চোখের জল নামছিল।

সে তার সমস্ত স্মৃতিগুলোকে হারিয়েছিল তাদের সকলে বাঁচাতে। দ্রুতগতিতে, তার চিন্তাশক্তি হারিয়ে ফেলার আগেই, সে রক্ষকের অন্তর-স্ফটিককে তার বুকের সঙ্গে চেপে ধরেছিল... তার হৃদয়ের মুখোমুখি।

তারপর মুখ ফিরিয়ে তয়া আর কিউয়ের দিকে তাকিয়ে, যারা তার দিকেই এগিয়ে আসছিল, সে ফিসফিস করে বলল, “আমাকে মনে রেখো... আমার খোঁজ কোর।”

তার দৃষ্টি এক কালো অন্ধকার সুড়ঙ্গে প্রবেশ করার আগে শেষ যে দৃশ্য কিওকো দেখতে পেয়েছিল তা হল তয়া ও কিউ চিৎকার করে তার নাম ডাকছিল এবং তার কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছিল। ওদের দু’জনের একজনের চোখ ছিল সোনালি আর অপরজনের চোখ ছিল গলিত রূপার রংয়ের... আর তারপরও কিওকোর জগৎ অন্ধকারে ডুবে গেল।

কিওকোর মিলিয়ে যাওয়া এবং সে যে মারা যেতে চলছে সেই ভাবনা কিউ অনুভব করতে পারছিল। সে তয়ার সঙ্গে সমলয়ে পা মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল, কিওকোর কাছে পৌঁছানোর মরিয়ে চেষ্টা করছিল, আর ঠিক তখনও সব বদলে গেল, যেন এক বিন্দু জল তার চোখের মণিতে এসে আছড় পড়ল। কিওকোর দিক থেকে তরঙ্গ তৈরি হল, আর সে মধ্যগগনে অদৃশ্য হয়ে গেল। আর তারই সঙ্গে মিলিয়ে যেতে যেতে ক্রোধে উম্মত্ত হায়াকুহেইয়ের চিৎকারও শোনা গেল।

কিউয়ের মনটা ছাৎ করে উঠল যখন তার সঙ্গে একই স্বরে চিৎকার করতে থাকা তার ভাইয়ের কণ্ঠস্বর হঠাৎ করে থেমে গেল, কেউ যেন এক নিমেষে কণ্ঠের তার ছিন্ন করে দিয়েছিল, এবং সে বুঝতে পারল তয়াও তাদের সাথেই মিলিয়ে গেল। কিউ ঝপ করে সেই খালি বদ্ধভূমিতে এসে পড়ল যেখানে মাত্র এক মুহূর্তে আগেই তার অভীষ্ট লক্ষ্য অবস্থান করছিল। তার ক্রুদ্ধ চোখের দৃষ্টি চারিদিকে তাকে খুঁজল কিন্তু কাউকেই আর দেখতে পেল না। সকলেই অদৃশ্য হয়ে গেছিল।

কিউ তার অ্যাড্রিনালিক গ্রন্থিতে প্রচন্ত আলোড়ন অনুভব করতে পারছিল এবং বুঝতে পারছিল তা থেকে ক্ষরিত রস তার রক্ষক রক্তে গিয়ে মিশছে। কোন কিছুই তার দৃষ্টি আর অনুভূতির বাইরে ছিল না। সে এখন কিওকোর সবটুকু স্মৃতির মালিক হয়ে রইল। কিওকো তাদেরকে বাঁচাতেই তার জীবনের সবটা দিয়ে গেছিল, আর তার চলে যাবার আকের মুহূর্ত অবধি কিউ তার সেই অঙ্গীকার শুনতে পেয়েছিল। কিওকো হয়ত জানতেই পারেনি সে কী করে গেছিল... কিন্তু সে তার সবকিছু তার সঙ্গে করে নিয়ে চলে গেছিল, শুধু কিউকে পিছনে ফেলে রেখে।

কিউ তার চারিদিকে যে সম্মোহন বিছিয়ে রেখেছিল যাতে ওই পবিত্র স্ফটিককে তার বিরুদ্ধেই কাজে লাগানো না যেতে পারে, সেই সম্মোহনী শক্তিই তাকে অন্যদের গন্তব্য অনুসরণে অক্ষম করে তুলেছিল। মাত্র কয়েকটা ফিসফিস শব্দেই কিওকো তার থেকে তার সব কিছু ছিনিয়ে নিয়েছিল।

তার শরীর ঋজু ও উদ্ধত অবস্থায় ছিল। তার হাঁটু অবধি বিস্তৃত রূপালী রংয়ের চুল তার দেহের চারিদিকে ঝুলছিল এবং তার সাদা রংয়ের রেশমের জামার হাতা হাওয়ায় পৎপৎ করে উড়ছিল যেন সে কোন অদৃশ্য ঝড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিল যে ঝড়ের সঙ্গে তার ক্রোধে অন্ধ হয়ে যাওয়া তার অন্তরের মধ্যে চলা ঝড়ের মিল ছিল।

তার দৃশ্যপট থেকে মিলিয়ে যাওয়া মল্লভূমির দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকা তার চেহারা-ছবি অনেকটা কোন দেবদূতের মতো লাগছিল... রাজকীয়, পরাক্রমী এবং নিষ্কলঙ্ক। সহসা সে তার হাত তার গালে নিয়ে এল যেখানে একাকী এক অগ্নিবর্ণ অশ্রু ধীরে ধীরে নেমে আসছিল যাকে আটকানোর মত ক্ষমতা তার সেই সময় ছিল না।

কিউয়ের দৃষ্টি পাখির গা থেকে খসে পড়া পালক যেভাবে ভেসে বেড়ায় সেইভাবেই ভেসে বেড়াচ্ছিল, তাকে এক বিশালাকার সোনালি দমকে মুড়ে দিয়ে, তার বয়স-বিহীন জীবনকে প্রথমবারের জন্য উদ্ঘাটিত করে।

এই মল্লভূমি থেকে যে একমাত্র আঘাত সে পেয়েছিল তা তার হৃদয়ে আড়াআড়িভাবে প্রতীত হচ্ছিল... সেই হৃদয় যা আদৌ আছে বলে কেউ কোনদিন ভাবেনি। তার দৃষ্টি আন্দোলিত হচ্ছিল সেই কুমারী প্রতিমার উপর যা মাত্র কয়েক ফুট দূরত্বেই দাঁড়িয়েছিল এবং সে ফিসফিস করে বলে উঠল, “কিওকো, আমি তোমাকে ত্যাগ করিনি। তোমাকে আবার খুঁজে পেতে এক হাজার বছরের দূরত্বও আমার কাছে কিছুই নয়….”

অধ্যায় ২ "অপর দিক"

সময়ের অন্তরের অপর দিকে, দু’বছর পরে... এবং ভবিষ্যতে এক হাজারেরও বেশি বছর পরে।

চিঠিটা হোগো মঠের উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছিল। কিছু আগেই পত্রবাহেকর দেওয়া অতি সুন্দর দেখতে ওই খামটাকে হোগোদাদু তার সঙ্গে করে নিয়ে তার সেই টেবিলের দিকে ফিরে যেতে যেতে সেটাকে দেখলেন, যেখানে বসে তিনি চা পান করছিলেন। দরজায় কড়া নাড়া শোনার আগে অবধি তিনি তার বেশিরভাগ সময়ে অতি সক্রিয় থাকা বাড়ির শান্তি ও নীরবতা উপভোগ করছিলেন।

বাকি সকলেই সেই সন্ধ্যের জন্য বাইরে বেরিয়েছিল। তামা তার বন্ধুদের সঙ্গে শহরের গেম ক্লাবে, আর কিওকো লাইব্রেরিতে পড়তে গেছিল, অন্যদিকে, মিসেস হোগো কিছু মুদিখানা সামগ্রী কেনাকাটার জন্য বেরিয়েছিলেন।

টেবিল থেকে একটা ছুরি তুলে নিয়ে দাদু সোনালি তারের প্রান্তের খামটির একপ্রান্তে চালিয়ে দিলেন। তারপর ভিতরে হাত চালিয়ে সোনালি তারের পান্তযুক্ত উচ্চমূল্য প্রদত্ত চিঠিটা বের করে আনলেন এবং পড়তে শুরু করে দিলেন। তিনি যত পড়ছিলেন তার চোখ ততই বিস্ফারিত হচ্ছিল। বিষয়টা ছিল একটা স্কলারশিপ প্রসঙ্গে, শহরের অপর প্রান্তের শহরতলির কোন এক অতি ব্যয়বহুল স্কুলের সম্পূর্ণ পঠন-পাঠনের স্কলারশিপ।

"কে.এল. বিশ্ববিদ্যালয়।" বহু বছর পর প্রথমবার তার বৃদ্ধ কণ্ঠে বিস্ময়ের শ্বাসাঘাত দেখা গেল। তাতে লেখা ছিল, সমস্ত খরচ মিটিয়ে দেওয়া হবে, এমনকি সে যে ছাত্রাবাসে থাকবে তার ভাড়াও, এবং তাতে স্কুলের প্রতিষ্ঠাতার স্বাক্ষর ও তার নামের অদ্যাক্ষর কে.এল. লেখা ছিল।

দাদুর বৃদ্ধ মুখটাতে বহু বছর পর চওড়া হাসির রেখা দেখা গেল। কিওকো আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়তে চলেছে। তিনি জানতেন ও এ ব্যাপারে খুবই চিন্তিত ছিল যে, স্কুলে এতদিন ধরে না যেতে পারার কারণ হয়ত ওকে আর কোন স্কুলেই নেওয়া হবে না এবং ওর পড়াশোনা হয়ত শেষই হয়ে যাবে, কিন্তু এখন ও সব্বাইকে টপকে সেই স্কুলে যেতে চলেছে যেটা এই অঞ্চলের অন্য সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের থেকে ভাল।

কিছু একটা চিন্তায় তার কপালে ভাঁজ পড়ল... এটা এমন একটা স্কুলে যেটাতে ভর্তি হতে পারাটা সবচেয়ে কঠিন ব্যাপার, কারণ তার চেনা কাউকেই তিনি আজ অবধি এই স্কুলে ভর্তির জন্য আবেদন করে সফল হতে দেখেননি। আবার এই রটনাও আছে যে, এই স্কুলে নাকি শিক্ষার্থীর সংখ্যা খুবই কম যেহেতু এখানে ভর্তি হতে গেলে অত্যন্ত উচ্চমানের আবশ্যকতা পূরণ করতে হয়। ও কীভাবে এমন একটা স্কুলে ভর্তির সুযোগ পেয়ে গেল যার জন্য ও আবেদন পর্যন্ত করেনি?

তার মাথায় গত দু’বছরের মধ্যে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা ঘোরাফেরা করতে লাগল। মঠ থেকে সব কিছু ভুলে গিয়ে কিওকো যখন ফিরে এসেছিল তখন তার স্বাভাবিক হতে বেশি কিছুটা সময় লেগে গেছিল। সে হঠাৎ করে কবে ফিরে এসেছিল সে ব্যাপারে এরা সকলেই বেশ বিভ্রান্ত ছিল, কারণ ও চলে যাবার পর থেকে ওর আর বিশেষ কিছু মনে ছিল না।

হোগো পরিবার জানত সে কোথায় গেছিল কারণ ও বহুবার পা ফসকে সময়ের তোরণে এপাশ-ওপাশ করেছিল... কিওকোই একমাত্র মেয়ে যে হঠাৎ করেই সব কিছু ভুলে বসেছিল।

Ваша оценка очень важна

0
Шрифт
Фон

Помогите Вашим друзьям узнать о библиотеке

Скачать книгу

Если нет возможности читать онлайн, скачайте книгу файлом для электронной книжки и читайте офлайн.

fb2.zip txt txt.zip rtf.zip a4.pdf a6.pdf mobi.prc epub ios.epub fb3

Популярные книги автора