Amy Blankenship - সময়ের অন্তর стр 3.

Шрифт
Фон

তার এমনকি তয়ার কথাও মনে ছিল না। কিন্তু দাদুর কাছে সে সব ঠিকই ছিল, কারণ সময়-অতিক্রমী রক্ষকের ব্যাপারে ও যদি ভুলে যায় তাহলে তার থেকে ভাল আর কিছু হয় না। অন্য ওই দিকের ব্যাপারে এবং যে বিপদ তার সাথে এসেছিল সে সব কিছু যে ও ভুলে গেছে সেটা ভালই হয়েছে।

কিছুক্ষণের জন্য তার চোখে বিষাদের ছায়া নেমে এসেছিল। হ্যা, যা ঘটেছিল পরিবারের সকলেই তার প্রায় সবটাই জানে, কারণ কিওকো দুই বিশ্বের মধ্যে যাতায়াত করত এবং যখন সে তাদের দিকে থাকত, তখন সে তাদের সবাইকে সবচেয়ে বেশি আনন্দে রাখত। বৃদ্ধ এ-ও জানতেন যে, কিওকো এমন অনেক কিছুই তাদের থেকে লুকিয়ে রাখতে পেরেছিল যা ও চাইত না সকলে জানুক। সেই জিনিসগুলো এরা আর কোনদিনই জানতে পারবে না কারণ এখন ও সেই সব গোপন রহস্যই ভুলে গেছে।

এমনকি তার ছোট ভাই তামা তাকে অনেক কিছুই বলেছিল যা সে জানত; কিন্তু সে সব শুনে ও শুধু মাথা নেড়েছিল এবং চোখ নামিয়ে নিয়েছিল। ওর শুধু মনে ছিল যে, ও সেই অন্য জগতে একেবারে একা ছিল। দৈত্য পরিপূর্ণ একটা জগতে।

আনন্দের টানে দাদুর ঠোঁট দুটো পাতলা হয়ে এসেছিল। তিনি জানতেন সব আবার ঠিকঠাক হয়ে গেছিল কারণ কিওকো তাকে বলেছিল সে তার অন্তরের মধ্যে অনুভব করতে পারে যে, রক্ষকের অন্তর-স্ফটিক আবার তার কাছে ফিরে আসছে, আর সেটা হয়ে এসেও গেছে। কয়েক সপ্তাহ পরে, সে তার স্কুলের কাজে নিজেকে ডুবিয়ে দেয় এবং খুব ভাল ফল করতে শুরু করে। দাদু সদর দরজা খোলার শব্দ পেলেন এবং তার মুচকি হাসি প্রসারিত হল।

তিনি চিঠিটাকে একটা সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে চুমু খেতে খেতে তার নাতনীকে রান্নাঘরে প্রবেশ করতে দেখছিলেন... কিওকোর খুব ভাল লাগবে।

*****

তিন সপ্তাহ পরে...

অতীতের কোল থেকে বেরিয়ে আসা মেয়েটা যখন স্কুলের দিকে যেত তখন স্বর্ণাভ আলোয় ভরা চোখ তাকে দেখত। সে ওকে খুঁজে পেয়েছিল এবং কোনভাবে সে আবার সবকিছু ঠিক করে দেবে। সে তারা মানবদেহ কিছুক্ষণের জন্য খসে গেছে বলে অনুভব করেছিল এবং তার চোখে সোনা-ঝড়া স্মৃতিতে পরিপূর্ণ হয়ে গেছিল সেই দৃশ্যের কথা ভেবে যা সেই মারাত্মক যুদ্ধভূমিতে ঘটে গেছিল।

জানালার ও প্রান্ত থেকে ঘরে প্রবেশ করা সকালের সূর্যালোক ঘরের দেওয়ালে তার পিছনে যে ছায়া তৈরি করেছিল তাতে একটা অদ্ভুত অবয়ব ধরা পড়েছিল যার পিছনে পাখা ছিল। সে তার পাঞ্জা সমেত বাহু উপরে তুলল এবং তার চোখের দৃষ্টি সংকুচিত করল, আর তার পাঞ্জা দুটোকে ধীরে ধীরে মানব পরিধানের মধ্যে মিলিয়ে যেতে দেখল।

তার সেই রহস্যাবৃত চোখে সে ঋত্বিকার দিকে ফিরে তাকাল, তার অন্তরের শক্তিকে সে শান্ত করল। সময় ও কিওকোর পবিত্রতা দুইয়ে মিলে তাকে তার চারিপাশে অশুভের উপস্থিতির অনুভূতি দিচ্ছিল। অসমাপ্ত সেই যুদ্ধ শীঘ্রই শুরু হবে। আর এবার... সে আর আগের মত ভুল করবে না।

কিওকো বিশাল ভবনটার দিকে মাথা তুলে তাকাল। তার কাছে এটা তার অজানা অতীতের কোন মহান প্রাসাদের মত লাগছিল। সে নিজের মধ্যেই মুচকি হাসল। না হেসে সে পারল না। স্কলারশিপের কথাটা জানতে পেরে এবং এটা জানতে পেরে যে, সে এখন সত্যি-সত্যিই এখানে থাকতে চলেছে, সে অত্যন্ত আনন্দ পেয়েছিল।

সে তামার দিকে ফিরে তাকাল। তার ব্যাগ ও জিনিসপত্র গুছিয়ে দিতে তামা তাকে প্রচুর সাহায্য করেছিল। কিওকো তার মা এবং দাদুকে সে যে এখানে থাকতে যাচ্ছে তা বলতে পেরে এবং তাদের বিদায় জানিয়ে বেশ আনন্দ পেয়েছিল। এখন এই বিপুল স্বাধীনতার হাতছানি তার মনকে অনেকটা ঝরঝরে করে তুলেছিল। সে একটা দীর্ঘস্বাশ ফেলেল এবং তার আস্বাদ গ্রহণ করল।

“কি রে কিওকো, তুই কি সারা দিন ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি ভিতরে গিয়ে নিজের ছাত্রাবাসের ঘরটা খুঁজে নেবে?” তামা ধমকে উঠে বলল, যদিও গোটা দৃশ্যটা তাকেও বেশ মুগ্ধ করেছিল। তামা বিস্ময় দৃষ্টিতে মূল ফটকের দিকে যাবার মহীরূহ খিলানটাকে মাথা তুলে দেখছিল।

কিওকোর হাতে একটা মানচিত্র ধরা ছিল এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঠিক দিকটাকে যুক্তকারী ওই বিশালাকার ভবনের উপর তার তর্জনী রেখেছিল। "ওটাই সেই ভবনটা হওয়া উচিত।" কিওকো পিছন ফিরে তাকাল এবং তামার উদ্দেশ্যে চোখ টিপল। "সকাল থেকে আমাকে এত সাহায্য করার জন্য তোকে ধন্যবাদ।"

তামা মুচকি হাসল, কিছুটা যেন বিব্রত বোধ করল। "কেন নয়, কিওকো, এইভাবেই আমি অন্তত কিছুদিনের জন্য হলেও তোর থেকে কিছুটা মুক্তি তো পাব, আর সেটাই অনেক।" সে কিওকোকে একেবারে বোল্ড-আউট করে দিয়েছিল মনে হল, কথাটা শেষ করে সে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল।

কিওকো ওকে তাড়া করল আর তামা ছুটতে শুরু করল, কিন্তু কিওকো কিন্তু হঠাৎই থেমে গেল, কিওকোর মনে হল দুটো চোখ যেন ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে।

ঝটকা হওয়ায় কিওকোর চুল উড়ে-উড়ে আলোয় মাখা ওর সোনালি গালের উপর পড়ছিল যখন ও মাথা তুলে উপরে ভবনটার দিকে তাকাল সেই চোখ দুটোর খোঁজে যা তাকে দেখছিল বলে তার মনে হচ্ছিল, কিন্তু সে কারো দেখা পেল না। গত কয়েক বছরে সে অদ্ভুত কোন কিছুর অনুভূতি পাবার ক্ষমতা লাভ করেছিল, এবং সে বুঝতে পারছিল নিশ্চিত কেউ আছে... তাকে দেখছে। সে তার স্পর্শ অবধি পাচ্ছিল।

কিওকোর মনে হয়েছিল উপরের দিকে একটা জানালায় সে একটা গতিবিধি দেখেছিল, কিন্তু খেয়াল করে তাকানোর পর ও দেখল ওটা খালি, ওখানে কেউ-ই নেই। কিওকো একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল এই ভেবে যে দুশ্চিন্তার কারণ বোধ হয় আর নেই। ও আলতো করে ওর নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে হতাশাটা কাটিয়ে ওঠার অপেক্ষা করল। এইবার সে তামাকে ধরে ফেলল কারণ ততক্ষণে সে দরজার মধ্যে দিয়ে প্রবেশ করেছিল। দু’জনেই স্থির হয়ে চারিদিকটা একবার দেখল।

"এটা দারুণ জায়গা,” তামা উপরের দিকে তাকিয়ে তারপর একটু ঝুঁকে ভারি গলায় ফিসফিস করে বলল। “তোর হয়ত একটা মানচিত্রের দরকার হবে... তোকে যতটুকু চিনি, না হলে তুই এখানে পথ হারিয়ে ফেলবি।”

কিওকো সম্ভবত ওর এই সব কথা শুনলই না, কারণ ওর চোখ দুটো তখন হলের ভিতের দিকে ঘোর-ফেরা করছিল। যে ঘরটার মধ্যে ওরা দাঁড়িয়েছিল সেটা কিছু না হলেও তিনতলা সমান উঁচু ছিল এবং সিঁড়িটা ঘুরে-ঘুরে অন্য তলাগুলো অবধি যাচ্ছিল। ঘরের একদিকে একটা বিশালাকার গ্রন্থাগার ছিল, আর অন্য দিকটা দেখে একটা মনোরোঞ্জনের স্থান বলে মনে হচ্ছিল, আর ঠিক মাঝখানটায় ছাদ থেকে একটা ভীমকায় ঝাড়বাতি ঝুলছিল।

“হে ভগবান, ওটা যেন ধপাস করে পড়ে না যায়,” হাওয়ায় উড়তে থাকা চুল ঠিক করতে-করতে সে বলল।

ঝাড়বাতিটার ঠিক নিচেই বহুমূল্য আসবাবপত্রের সাজানো বসার জায়গা ছিল। ওখানে অনেক ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যস্ত হাঁটা-চলা লক্ষ্য করা যাচ্ছিল, যদিও সময়টা ছিল খুব সকালবেলা। কিওকো যত দ্রুত সম্ভব এখানে চলে আসতে চেয়েছিল, আর এখন ঘড়িতে মাত্র সকাল ৭:৩০টা বাজে। কিওকো দ্রুত তার হাতে থাকা কাগজপত্রগুলোকে আরেকবার দেখে নিল, ঠিক কোথাও ওকে যেতে হবে তা নিশ্চিত করে নেবার জন্য।

ঠিক তখনই সে তার কাঁধের উপর তামার হাতের স্পর্শ পেল এবং আঙ্গুল দিয়ে তাদের সামনে থাকা সেই ঘোরানো সিঁড়িটা দিয়ে উপরে যাবার ইঙ্গিত করল। কিওকো যেহেতু স্থায়ীভাবে থাকার জন্য সেখানে এসেছিল তাই তাদের দু’জনের মাঝখানে চার-চারটি সুটকেস ছিল, আর সেগুলো বেশ ভারি-ভারিই ছিল।

তামাকে বেশ হতোদ্যম দেখাচ্ছিল। “তুই কি ইংয়ার্কি করছিস নাকি!” সবচেয়ে বড় সুটকেসটার হাতলটা একবার তুলে মাটিতে ছেড়ে দিল কারণ সে জানত ওর নিচে থাকা চাকাগুলো এবারে আর কোন কাজে আসবে না। “আমার বয়স মাত্র ১২ বছর হলেও আমি তো আর চিৎকার করে কাঁদতে পারি না।”

সে তার সংকল্পকে প্রকাশ করার জন্য নিজের কাঁধ ঝাঁকাল একবার।

ঠিক তখনই তার পিছন থেকে এক পুরুষ কণ্ঠ জিজ্ঞাসা করে উঠল, "আপনি কি মিস কিওকো হোগো?", যা তাকে একেবারে হতচকিত করে দিল।

সে দ্রুত পিছনে ঘুরে উত্তর দিল, “হ্যাঁ।”

পিছন ফিরে সে খুবই হ্যান্ডস্যাম এক পুরুষকে দেখতে পেল এবং তার চোখের মণি যেন প্রসারিত হল। তার চকমপ্রদ এক জোড়া নীল চোখ ছিল এবং লম্বা-লম্বা কালো চুল ছিল, যা পিছনদিকে পনিটেল করে বাঁধা ছিল। কিওকো যখন বিস্ময় দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে ছিল তখন অদ্ভুত ঝোড়ো হাওয়া তার মুখ ছুঁয়ে বয়ে গেল। হাওয়ায় তার চুলের প্রান্তভাগ তার গাল স্পর্শ করল।

পুরষটি তার দিকে তাকিয়ে মৃদু ও আকর্ষক হাসি হাসল। তারপর, কিওকোকে আরও অবাক করে দিয়ে সেই পুরুষটি তুড়ি দিল এবং আরও দু’জন লোকে যেন শূন্য থেকে সেখানে এসে উপস্থিত হল, কিওকোর সুটকেসগুলো দেখল, এবং দ্রুত সেগুলোকে হাতে তুলে নিয়ে ঘোরানো সিঁড়ি দিয়ে উপরের দিকে উঠে যেতে থাকল। ওদের গতিবিধ দেখে কিওকোর চোখ ছানাবড়া হয়ে গেছিল, কিন্তু সে মুখে কিছু বলার আগেই, সেই পুরুষটি নিজের হাত বাড়িয়ে দিয়ে কিওকোর হাতটা ধরে ফেলল এবং নিজের ঠোঁটের কাছে টেনে এনে তার উপর কোন রাজকুমারের মতো করে চুম্বন করল।

"আমি কোতারো, আর তোমার মতো কোন সুন্দরীকে ভারি-ভারি জিনিস নিয়ে সিঁড়ি চড়তে আমি কিছুতেই দেখতে পারব না। আর এইবার তুমি যদি আমায় আজ্ঞা করো, তাহলে আমি তোমাকে তোমার ঘর অবধি ছেড়ে দিয়ে আসতে পারি।" কিওকোর হাত তার হাতের ধরেই কোতারো সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেল এবং তাকে নিয়ে সিঁড়ি চড়তে শুরু করে দিল।

তার আঙ্গুলের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হওয়া তাপ সম্ভবত তার বাহুর মধ্যে দিয়ে তার গোটা শরীরে ছড়িয়ে পড়ছিল... যা তার রক্ষকের রক্তকে উত্তেজিত করে তুলছিল। আর সেটা তাকে গোপন করতে হচ্ছিল। কোতারো এইবার কিওকোর হাতে সামান্য চাপ দিল এই ভেবে যে, এই সেই মেয়ে যার জন্য সে এতদিন অপেক্ষা করেছিল। কিওকোর ঘরের মধ্যে পা রাখতে-রাখতে কোতারোর মনে তেমন অনুভূতিই সঞ্চারি হচ্ছিল।

কিওকো তার কমনীয় ভ্রু কুঞ্চিত করে মনে-মনে হয়ত ভাবছিল, 'হে ঈশ্বর, আমাকে এই উদ্ধত পুরুষের হাত থেকে রক্ষা করো। এ আমি কোথায় এসে পড়লাম?'

কিওকো পিছন ফিরে তাকাল, আর তখনও হাঁ-করে তাকিয়ে থাকা তামার উদ্দেশ্যে একবার কাঁধ শ্রাগ করল। তারপর মাথা দুপাশে নাড়াল আর চোখের ভ্রু নাচিয়ে বলল, "তামা এরকম হাঁ-করে তাকিয়ে থেকো না, তোমার মুখে মাছি ঢুকে পড়তে পারে।" আর তারপরও তামা সম্বিত ফিরে পাবার আগেই সে আবার মাথা ঘুরিয়ে সেই তৎপর যুবকের পিছনে-পিছনে চলতে শুরু করে দিল, যার পরিচয় এখনও অবধি তার কাছে শুধুই কোতারো নামেই।

তার মনে মণিকোঠায় সে কিছু পরিকল্পনা করে রেখেছিল, যার মধ্যে তার ও তামার জন্য গোপন কিছু বিষয় ছিল। সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে-উঠতে পিছনে সে তামার বড়-বড় নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছিল এবং এই সময়ে সে একটা জয়ের আনন্দ উপভোগ করছিল।

সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় তাদের পাশ দিয়ে আরেকটি যুবক নিচের দিকে নেমে গেল, এবং যখন সে তাদের টপকে চলে গেল তখন কিওকো তার বুকের মধ্যে একটা ক্রুশের ঝলকানি অনুভব করল এবং তার দম আটকে গেল। কিওকোর আশে-পাশের জগৎ এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেছিল যখন যুবকটি তার পাশ দিয়ে ধীর গতিতে নেমে যাচ্ছিল। তারপর যেই তার হৃদপিণ্ড আবার স্বাভাবিকভাবে স্পন্দিত হতে শুরু করল, সব কিছু আবার স্বাভাবিকভাবে প্রতীত হতে শুরু করে দিল এবং ওরা উপরে দিকে উঠে গেল।

কিন্তু ওই সময়টায় তার গোটা শরীর জুড়ে এমন এক অস্বাভাবিকতা প্রবাহিত হয়ে গেল যেন ওর কিছু খোয়া গেল... অথবা সে যেন কিছু একটা হারিয়ে ফেলল আর তার জন্য তার দারুণ অভাব অনুভূত হল। এই অস্বাভাবিক অনুভূতিকে ঝেড়ে ফেলার চেষ্টায় সে কে তার পাশ দিয়ে চলে গেল তা দেখার জন্য পিছন ফিরে তাকাল না। তার মনে হল এই মুহূর্তে সে না-ই বা জানল এ সব কথা।

কিওকো যে মনে-মনে বেশ মজা নিচ্ছিল তা ধরতে পেরে তামা ফিসফিস করে বলল, “যাক, এখানে আশে-পাশে তোমাকে তোষামোদ করার অনেক যুবক রয়েছে দেখে ভাল লাগল।”

সিঁড়ির একেবারে উপরে উঠে গিয়ে কোতারোর পিছনে-পিছনে একটা বড় বারান্দা ধরে এগিয়ে যেতে-যেতে কিওকো পিছন ফিরে তাকাল, যে বারান্দার দু’পাশে অনেক দরজা ছিল। তার মনে হয়েছিল এগুলোই হয় ছাত্র-ছাত্রীদের থাকার ঘর, কিন্তু তারা তার কোনটিতেই দাঁড়াল না। ওই বারান্দার শেষ প্রান্তে পৌঁছে একটা দরজা সামনে এলো যার উপর মোটা হরফে লেখা ছিল প্রবেশ নিষেধ। এইবার সে কিছুটা ধন্ধে পড়ে গেল যখন কোতারো ও সুটকেস-বাহক অন্য দুই পুরুষ সেই দরজা দিয়ে স্বচ্ছন্দে ঢুকে পড়ল যেন ঘরটা তাদের, আর আরও একধাপ সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেল।

তামা কিওকোর কাছে এগিয়ে এল এবং বলল, “আমার মন বলছে ওরা তোমাকে কোন অন্ধকূপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।”

কিওকো ওর কাঁধে হাত রেখে কিছুটা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল, “আমরা উপরের দিকে যাচ্ছি গবেট, নিচের দিকে নয়।”

“তার মানে, ভবনের মাথায় কোন খালি ঠাণ্ডা ঘর আছে হয়ত,” তামা চটজলদি তার পিছন থেকে উত্তর দিল।

'যাই থাকুক না কেন আমি অন্তত কিছুটা ঠিকঠাকভাবে এখানে থাকতে পারব,’ কিওকো মনে-মনে এই কথা ভাবছিল যখন তারা এক প্রস্ত সিঁড়ির সামনে এসে উপস্থিত হল, তারপর তারা আরেকটা বারান্দায় এসে পৌঁছাল, কিন্তু এবারেরটা খুব সুন্দর ছিল। এর মেঝেটা শ্বেত পাথরের তৈরি মনে হচ্ছিল। দরজাগুলো একটা অপরটার থেকে অনেকটা করে দূরে ছিল। এই বারান্দায় মাত্র তিনটি ঘর ছিল, এবং কিওকো মনে-মনে কিছু উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছিল এই ভেবে যে, কোতারো হয়ত জানেই না শেষ অবধি তাকে কোথায় যেতে হবে।

কোতারো শেষ ঘরের দরজাটার কাছে এসে দাঁড়াল, সে মনে-মনে ভাবছিল এই মেয়েটি নিশ্চয়ই খুব বিশেষ কেউ হবে কারণ এই বারান্দায় অনেকের প্রবেশাধিকারই নেই, এবং গোটা ক্যাম্পাসের মধ্যে এই ঘরটাই সবচেয়ে ভাল ছিল। কোতারো দরজার সামনে এসে কিওকোর ও তার বন্ধুর এসে পৌঁছানো অবধি অপেক্ষা করল।

কিওকোকে কিছুটা বিক্ষিপ্ত দেখে কোতারো মুচকি হাসল। সে বুঝতে পারছিল কিওকো কিছুটা দুশ্চিন্তায় রয়েছে। সে তার চিন্তিত চোখ দুটোর উপর দৃষ্টি রাখল এবং বুঝতে পারল কিওকোর হৃদস্পন্দন দ্রুত হচ্ছে, কিন্তু এই মুহূর্তে সে তাকে যা বলা হয়েছে সেটাই করতে চাইল।

সে কিওকোর দিকে তাকিয়ে তার বাহু প্রসারিত করে, হাতের তালু খুলে ইশারা করল। "এবার আমি বিদায় নেব, কিন্তু তোমার যদি কোন কিছুর দরকার হয়..." কোতারো কিওকোর হাতে সেই ঘরের চাবি তুলে দিল এবং তার দিকে এমনভাবে তাকাল যা কিওকোকে কিছুটা লজ্জিত করল, আর তারপর সে কাঁধ ঝাঁকিয়ে সঙ্গে থাকা দুই যুবককে তার পিছনে আসতে নির্দেশ করল।

কিওকো ও তামা উভয়েই পিছন ফিরে তাদের ততক্ষণ অবধি দেখে যেতে লাগল যতক্ষণ না তারা তাদের দৃশ্যপটের বাইরে চলে গেল, তারপর কিওকো দরজার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। দরজার উপরেই একটা নামের ফলক দেখা যাচ্ছিল যাতে স্পষ্ট করে সোনালী অক্ষরে কিওকো হোগো লেখা ছিল।

তামা বোনের কাঁধে হাত রেখে ঝাঁকিয়ে দিয়ে মুচকি হাসল। "এভাবে হাঁ-করে তাকিয়ে থাকলে তোমার মুখে মাছি ঢুকে পড়তে পারে।"

কিওকো এই কথা শুনে চোখ পাকাল, কারণ তার কথাই যে তার কাছে এভাবে ফিরে আসতে পারে সে তা ভাবেনি। চাবিটা দিয়ে সে ঘরের দরজার তালা খুলে আস্তে করে দরজাটাকে খুলল এবং ভিতরের দিকে তাকাল।

ঘর দেখে তামার চোখ ছানা-বড়া হয়ে গেল, আর সে কিওকোকে ঠেলে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ল। “হতেই পারে না! এতো আমাদের গোটা বাড়িটার চেয়েও বড় একটা ঘর দেখছি।" তার বিস্ময়-মাখা শব্দ গোটা ঘরে প্রতিধ্বনিত হতে লাগল। “তুই তো এর মধ্যেই একটা আস্ত নাচের ক্লাব খুলে ফেলতে পারিস।”

“আমার অন্ধকূপ তাহলে তোল পছন্দ হয়েছে বল?” কিওকো তার ভাইয়ের সকালের ঠাট্টার জবাব দিল।

*****

দু’ঘণ্টা পরে, তামাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেবার অনেক পর, কিওকো তার ঘরের বাথরুমের তাকে তার জিনিসপত্রগুলো সাজিয়ে রাখছিল। সে আবারও ঘুরে তার বাথটাবটার দিকে দেখল যেটা এতটাই বড় যে পাঁচজন একসঙ্গে চান করতে পারে।

Ваша оценка очень важна

0
Шрифт
Фон

Помогите Вашим друзьям узнать о библиотеке

Скачать книгу

Если нет возможности читать онлайн, скачайте книгу файлом для электронной книжки и читайте офлайн.

fb2.zip txt txt.zip rtf.zip a4.pdf a6.pdf mobi.prc epub ios.epub fb3

Популярные книги автора