Amy Blankenship - সময়ের অন্তর

Шрифт
Фон

দ্য হার্ট অব টাইম

দ্য গার্ডিয়ান হার্ট ক্রিস্টাল সিরিজ বই ১

অ্যামি ব্ল্যাঙ্কেনশিপ

অনুবাদক: চন্দ্রিল মণ্ডল

গ্রন্থস্বত্ব © 2008 Amy Blankenship

ইংরেজি সংস্করণের প্রকাশক অ্যামি ব্ল্যাঙ্কেনশিপ

দ্বিতীয় সংস্করণের প্রকাশক TekTime

সব স্বত্ব সংরক্ষিত।

সময়ের অন্তরের কিংবদন্তি

দুনিয়া বদলে যায়... কিন্তু প্রকৃত অর্থে কিংবদন্তিরা কখনও হারিয়ে যায় না।

সময়ের একেবারে শুরু থেকেই আলো আর অন্ধকার নিরন্তর একে-অপরের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে আসছে। এক-একটা বিশ্বের ভাঙ্গা-গড়া চলছে তাদের স্রষ্টার পদতলে, কিন্তু তা সত্ত্বেও শুভ আর অশুভর নিরন্তর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কোনদিন কোন প্রশ্ন হয়নি। যদিও, কোন কোন সময় এই মিশ্রণের মধ্যেই কোন নতুন জিনিস নিক্ষেপিত হয়... সেই জিনিস, যা চায় দুই পক্ষই কিন্তু পায় কোন এক পক্ষই।

চারিত্রিকভাবে বিরোধাভাসপূর্ণ এই রক্ষকের অন্তর-স্ফটিক হল সেই ধ্রুবক যা এই দুই পক্ষই বরবার অর্জনের প্রচেষ্টা চালিয়ে এসেছে। আমাদের পরিচিত বিশ্বকে সৃষ্টি ও ধ্বংস করে দেবার ক্ষমতা এই স্ফটিকাকৃতির পাথরটির রয়েছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও এটি আবার একই সাথে দুনিয়ার সমস্ত দুঃখ-কষ্টেরও অবসান ঘটাতে পারে। কিছু লোকের মতে এই স্ফটিকের নিজস্ব মন আছে... আবার অন্যদের মতে এই সব কিছুর পিছনে রয়েছেন ঈশ্বর।

প্রতিবার যখন স্ফটিকটি আবির্ভুত হয়েছে, এর রক্ষকেরা সর্বদা একে সেই সব লোকেদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য তৈরি থেকেছেন যারা এটিকে স্বার্থপরের মতো ব্যবহার করবে। এই সব রক্ষকদের পরিচয় কোনদিন বদলায়নি এবং তারা সমকালীন জগৎ বা সময় নির্বিশেষে একইরকম প্রাবল্যের সঙ্গে এটিকে ভালবেসে এসেছেন।

বহু প্রাচীন এই রক্ষকদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে এক মেয়ে, যে এদের বড়ই স্নেহের। মেয়েটির নিজের মধ্যেই এই স্ফটিকের নিজস্ব শক্তি নিহিত আছে। সেটাই স্ফটিকের ধারক ও শক্তির উৎস। এই দুইয়ের মধ্যেকার রেখাটি অনেক সময় ঝাপসা হয়ে যায়, এবং স্ফটিকটিকে রক্ষা করার কাজটি ক্রমপর্যায়ে অন্য রক্ষকদের হাত থেকে এই ঋত্বিকাকে রক্ষা করায় বদলে যায়।

এই সেই সুরা যা অন্ধকারের অন্তরের পানীয়। এটি স্ফটিকের রক্ষকদের দুর্বল করে দেবার ও আক্রমণের অবস্থায় নিয়ে আসার সুযোগ। অন্ধকার এই শক্তির কামনা করে এবং সেই সঙ্গে সেই মেয়েরও কামনা করে ঠিক যেমনভাবে কোন পুরুষ কোন নারীর করে থাকে।

এই মাত্রা ও বাস্তবতাগুলির প্রতিটির মধ্যেই তুমি একটি গোপন উদ্যানের সন্ধান পেতে পারো যা সময়ের অন্তর (Heart of Time) নামে পরিচিত। সেখানে হাঁটু মুড়ে বসা এক কমবয়সী ঋত্বিকার প্রতিমা দেখতে পাওয়া যাবে। তাকে ঘিরে রয়েছে শতাব্দী-প্রাচীন এক যাদুবিদ্যা যা তার গোপন সম্পদকে লুকিয়ে এবং অত্যন্ত যত্নে সংরক্ষিত রাখে। কুমারী প্রতিমার দুই বাহু প্রসারিত, যেন অত্যন্ত মূল্যবান কোন কিছু তার হাতে এসে ধরা দেবার অপেক্ষায় সে রয়েছে।

কিংবদন্তি আছে, সে আসলে সেই শক্তিশালী পাথরটি তার হাতে ফিরে আসার অপেক্ষায় রয়েছে যার নাম রক্ষকের অন্তর-স্ফটিক (Guradian Heart Crystal)।

এই প্রতিমার আসল রহস্য ও কীভাবে এর সৃষ্টি হয়েছিল তা শুধু রক্ষকেরাই জানেন। পাঁচ ভাইয়ের জন্মের আগেই তাদের পূর্বপুরুষ, তাদামিচি ও তার যমজ ভাই হায়াকুহেই, এই সময়ের অন্তরকে তার অন্ধকারতম ইতিহাসকালে রক্ষার কাজ করছিল। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই যমজ ভাই সেই বিভেদপ্রাচীরকে রক্ষা করে এসেছে যা মানবজাতিকে দৈত্যদের দুনিয়ায় পদার্পণ করা থেকে আটকায়। কাজটি ছিল খুব পবিত্র এবং মানবজাতি ও দৈত্যদেরকে একে-অপরের থেকে বাঁচিয়ে ও আড়াল করে রাখার জন্য তার দরকার ছিল।

তাদের রাজত্বকালে, অপ্রত্যাশিতভাবে, এই পবিত্র স্ফটিকের কারণে কতিপয় মানব দুর্ঘটনাবশত ওই বিভেদপ্রাচীর গলে দৈত্যদের রাজ্যে গিয়ে উপস্থিত হয়। কোন এক বিশৃঙ্খলার সময় এই স্ফটিকের শক্তি ওই বিভেদপ্রাচীরে চিড় ধরায় যা এই দুই জগৎকে আলাদা করে রাখত। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মানবজাতির নেতা ও তাদামিচি নিজেদের মধ্যে মৈত্রী স্থাপন করে এবং বিভেদপ্রাচীরের ওই ফাঁক বুজিয়ে দিয়ে আবার এই দুই জগৎকে একে-অপরের থেকে চিরতরে আলাদা করে রাখার চুক্তিতে আবদ্ধ হয়।

কিন্তু ওই সময়েই হায়াকুহেই ও তাদামিটি উভয়েই ওই মানবজাতির নেতার মেয়ের প্রেমে পড়ে যায়।

হায়াকুহেইয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই তাদামিচি ও মেয়েটির বাবা মিলে ওই ফাটল বুজিয়ে দেয়। বিপজ্জনক ত্রিকোণ প্রেমকে চিরকালের জন্য বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে ওই বিভেদপ্রাচীরের জোর আরও দশগুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে হায়াকুহেইর হৃদয় খান-খান হয়ে যায়... তার নিজের ভাই, তাদামিচি, কিনা তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে তাকে ও তার প্রিয় ঋত্বিকাকে চিরতরে আলাদা করে রাখার বন্দোবস্ত নিশ্চিত করে দিল!

ভালবাসা শুধু ভালবাসার মানুষ তৈরি করে না, হারানো ভালবাসা ভয়ংকর অপরাধী তৈরি করতে পারে। হায়াকুহেইয়ের ভগ্ন-হৃদয় তার মধ্যে আক্রোশের আগুন জ্বালিয়ে নিল এবং হিংসায় অন্ধ হয়ে সে তার নিজের ভাইয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হল, যা তাদামিচির জীবন শেষ করে দিয়ে দুই যমজ ভাইয়ের অমর আত্মাকে আলাদা করে দিল। অমরত্বের সেই ছোট ছোট টুকরো পাঁচজন নতুন রক্ষক সৃষ্টি করল যারা ওই বিভেদপ্রাচীরের রক্ষা করবে এবং তাকে হায়াকুহেইয়ের হাত থেকে বাঁচিয়ে রাখবে যে অশুভ জগতে প্রবেশ করে দৈত্যদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল।

অন্ধকার জগতের আঁধারে আটক হায়াকুহেই সময়ের অন্তরকে রক্ষা করার তার সমস্ত সংকল্প বিস্মৃত হয়েছিল... উল্টে সে তার সমস্ত শক্তি ওই প্রাচীর ভেঙ্গে ফেলার উদ্দেশ্যে কাজে লাগিয়েছিল। তার ঘন কালো লম্বা চুল, যা হাঁটুর নিচ অবধি যায়, এবং তার চূড়ান্ত সম্মোহনকারী মুখ তার দেবদূতের মতো চেহারা-ছবির পিছনে প্রকৃত অশুভ চরিত্রকে লুকিয়ে রেখেছিল।

আলো ও অন্ধকারের শক্তির মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে, কুমারী ঋত্বিকার পুনর্জন্ম লাভের ও অন্য প্রান্তে স্ফটিক ভেসে ওঠার সংকেতস্বরূপ ওই পবিত্র প্রতিমা থেকে চোখধাঁধাঁনো নীল রংয়ের আলো নির্গত হল।

রক্ষকেরা যেহেতু তার কাছাকাছি চলে আসে এবং তার রক্ষী হয়ে ওঠে, তাই শুভ ও অশুভর যুদ্ধ সত্যি-সত্যিই শুরু হয়ে যায়। তাই অন্ধকার জগতের প্রবেশপথ আলোর জগতের মধ্যেই রয়ে গেল।

তাদের বহু মহান দুঃসাহসির কাজের মধ্যে এটি ছিল অন্যতম...

অধ্যায় ১ "খণ্ডবিখণ্ড স্মৃতিমালা”

"কিওকো!!!!!!"

তয়ার চিল-চিৎকার জঙ্গলের সব প্রান্ত থেকে শোনা যাচ্ছিল। সেই চিৎকারের শব্দ ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল এবং সব কিছু আবার নিথর, শান্ত হয়ে উঠল, আর সবাই হায়াকুহেই এরপর কী করে তা দেখার অপেক্ষায় চেয়ে রইল।

কেউ-ই এটা থামাতে পারত না। সব কিছু এত দ্রুত গতিতে ঘটে গেছিল যে কেউ কোন প্রতিক্রিয়া দেবার সময়ই পেয়ে ওঠেনি। যা ঘটেছিল তাতে ওই পাঁচ রক্ষকের সকলেই স্থবির হয়ে পড়েছিল। তারা বিশ্বাসই করতে পারেনি যে, তারা রক্ষকের অন্তর-স্ফটিককে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে হায়াকুহেইয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে... আর শুধু তাকে পরাজিত করতে, একত্রিত হয়েছিল। শুধু সেই মানুষটাকেই হারাতে যাকে তারা সকলেই ভালবাসত এবং রক্ষা করত।

ওদিকে, যুদ্ধক্ষেত্রের একেবারে কেন্দ্রস্থলে যেন তাদের সবচেয়ে ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল।

হায়াকুহেই কিওকোকে জাপটে ধরে রেখেছিল আর তার ভয়ার্ত মুখের উপর তার দৃষ্টি স্থির করে রেখেছিল। আর হায়াকুহেইয়ের পূর্বপরিকল্পনা মতোই কিওকোর শরীরের নিচের অংশ তার সঙ্গে মিশে যাচ্ছিল। হায়াকুহেই ধীরে ধীরে তাকে গ্রাস করতে চেষ্টা করছিল এবং রক্ষকের অন্তর-স্ফটিককে তার দেহে এবং তার শূন্যতাকে তার অন্তঃকরণে মিশিয়ে নিতে চেষ্টা করছিল। এই দৃশ্য যারা দেখছিল তারা স্ফটিকের মধ্যে বিকৃতি আসতে দেখতে পাচ্ছিল, সেই অন্ধকার তার মধ্যে দেখতে পাচ্ছিল যা শুধুমাত্র অশুভ শক্তি থেকেই আসে।

কিওকো পাগলের মতো হায়াকুহেইয়ের থেকে নিজেকে ছাড়াবার চেষ্টায় তার বুকে ধাক্কা দিয়ে যাচ্ছিল, তার সর্বশক্তি প্রয়োগ করে সে সেই রক্ষক প্রভুর থেকে মুক্তির চেষ্টা করছিল যে সদ্য দৈত্যে পরিণত হয়েছে; আর হায়াকুহেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছিল।

হায়াকুহেই সেই মুহূর্তে শারীরিক শক্তির সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে গেছিল যা তার মাংসপেশি আর রক্তবাহের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল আর কিওকোর মুক্তি পাবার সেই বৃথা প্রচেষ্টা তার হাসির খোরাক জোগাচ্ছিল। তার লম্বা, ঘন, কালো চুল তাদের দু’জনকেই এমনভাবে আঁকড়ে ধরছিল যেন সেই নিজেই একটা জলজ্যান্ত প্রাণী। সেই মধ্যরাতের মতো মিশমিশে কালো চুলের প্রান্তভাগগুলো এমনভাবে কিওকোর পিছনে একে-অপরের সাথে একটা লোহার ফিতের মতো করে নিজেদের বুনে নিচ্ছিল যাতে কিওকো তার ছোট্ট শরীরটাকে হায়াকুহেইয়ের শরীরে পড়ে যাওয়া থেকে আটকাতে পারে।

কিওকো তার শরীরের সেই টানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ক্রমশ অসহায় হয়ে পড়ছিল যা তাকে হায়াকুহেইয়ের শরীরে মিশিয়ে দিচ্ছিল। কিওকো সেই অন্ধকার, শীতল শূন্যের মধ্যে পড়ে যেতে চাইছিল না যা আসলে হায়াকুহেইয়ের অন্তরাত্মা। সে সেই শূন্যের মধ্যে তার জন্য অপেক্ষারত সমস্ত দৈত্যদের উপস্থিতি অনুভব করতে পারছিল। কিওকোর শরীরের যে যে অংশ সেই শূন্যের মধ্যে প্রবেশ করছিল সেই সেই অংশ শীতল হয়ে উঠছিল। তার পা দুটো ঠাণ্ডা হয়ে বরফের মতো হয়ে গেছিল এবং তার পায়ের সমস্ত ত্বক জুড়ে কেউ যেন লক্ষ-লক্ষ পিন ফুঁটিয়ে দিচ্ছিল।

কিওকো বুঝতে পারছিল যে, সে যদি দ্রুত কিছু একটা না করতে পারে তাহলে সে তার দুটো পা-ই হারাবে। কিওকো সেই পাঁচ ভাইকে দেখতে পাচ্ছিল যারা গত কয়েক বছর ধরে তার রক্ষা করে আসছিল... তারা দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে তাকে দেখছিল। তারা প্রত্যেকেই তাকে বাঁচাতে চাইছিল কিন্তু যতক্ষণ অবধি তাকে একটা বর্মের মতো করে সামনের দিকে ধরে রাখা হয়েছে ততক্ষণ অবধি তারা তার কাছে যেতে ভয় পাচ্ছিল।

কিওকো রক্ষকদের বিশ্বাসঘাতকের হাতে পরাজিত হতে চাইছিল না। এ তো ওদের সকলের কাকা… সে কেন এত কাল আগে তাদের ভাইপো-ভাইঝিদের বিরুদ্ধে চলে গেছিল? কিওকোর পান্নার মতো সবুজ দু’চোখ ভয়ংকর ক্রোধ নিয়ে ঘুরে তার শত্রুর মুখে এসে স্থির হয়ে গেছিল। তার এই অবস্থা হবার কথা ছিল না... অন্তত সে যেমনটি থেকে এসেছে তাতে তো নয়ই। পুরোটাই হয়েছিল তার নিজের ভুলের জন্যই।

তার চোখের দৃষ্টি হায়াকুহেইয়ের তীক্ষ্ণ চাউনির উপর সন্নিবিষ্ট হল। কিওকোই এই স্ফটিক এই জগতে নিয়ে এসেছিল এবং এটা তাকেই এই জগত থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে যদি তাকে সেটা নিয়ে নরকেই যেতে হয়।

কুড়ি ফুটেরও কম দূরত্বে দাঁড়িয়ে থাকা কিউ উন্মত্ত গতিতে তার ধ্বংসাত্মক তলোয়ার ‘হাকাইশা’-কে টেনে বের করে আনল। সে কিছুতেই তার কাকার... তার শত্রুর, এই ভাবনাকে মেনে নিতে পারছিল যে সেই মানব-কন্যাকে স্পর্শ করেছে যাকে কখনও পরম শ্রদ্ধা করত। ওই উন্মাদের দুই বাহু-পাশে কিওকোকে এতটাই ভঙ্গুর একটা বস্তুর মতো দেখাচ্ছিল যে, লড়াইটা এখন অশুভর বিরুদ্ধে পবিত্রর লড়াইয়ে পর্যবসিত হয়েছিল।

রক্ষকদের রাজ্যের প্রভু... কিউ, পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে বয়োঃজেষ্ঠ, সেই মুহূর্তে যা করতে পারত তাতে কিওকোর আঘাত লাগা ছাড়া আর কিছুই হত না। সে মনে মনে জানত যে, স্ফটিকের শক্তি তার কোন ক্ষতি করতে পারত না কারণ এই লড়াই শুরু হবার আগেই সে এমন এক জাদুমন্ত্র ব্যবহার করেছিল যা অন্য সমস্ত জাদুবিদ্যাকে আটকে দেয়। বস্তুত, সে হায়াকুহেইয়ের দ্বারা রক্ষকের অন্তর-স্ফটিক তার বিরুদ্ধে ব্যবহারে জন্য একপ্রকার তৈরিই ছিল।

কিন্তু এখন যেটা ঘটছে... সে কখনও তার কল্পনাই করেনি। সে কোনভাবেই কিওকোকে আহত করতে চায়নি... কখনোই না, অন্তত ততক্ষণ অবধি তো নয়ই যতক্ষণ তার হাতে তাকে আটকাবার ক্ষমতা আছে।

কোন অত্যন্ত অন্ধকারময় দুঃস্বপ্ন থেকে উঠে আসা হায়াকুহেইয়ের ছেড়ে দেওয়া সেই দৈত্য-পিশাচেরা যখন মাটি থেকে ঘষটে-ঘষটে উঠে তার শরীরকে আঁকড়ে ধরে তাকে স্থবির করার চেষ্টা করছিল তখন সে এতটুকুও অসুবিধায় পড়েনি। কিউ তার ছোট ভাই তয়ার চোখে ভয়ংকর আগুন দেখতে পেল।

হায়াকুহেইয়ের তার কিছু দৈত্য-পিশাচ দিয়ে তয়াকে আক্রমণ করেছিল, তাকে স্থবির করে দেবার চেষ্টায়, কিন্তু তয়া তার বিরুদ্ধে প্রতিশোধের চেষ্টা তখনও ছটফট করছিল। ভিতরে-ভিতরে, কিউ তার ভাইয়ের উপর থাকা এই প্রতিরোধী শক্তিকে ধন্যবাদ দিচ্ছিল... কারণ যদি তা না থাকত, তাহলে তয়া ভবিষ্যৎ পরিণামের কথা না ভেবেই আক্রমণের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ত। কিওকোকে এইরকম এক বিপদে পড়তে দেখে তয়া দিক-বিদিক জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়েছিল।

কিউ তয়ার প্রতিটা হৃদস্পন্দের সাথে সাথে তার রক্ষকের শক্তির তীব্রতার বৃদ্ধি অনুভব করতে পারছিল, যার মধ্যে তার নিজের ও তার ভাইয়েদের শক্তিও মিশে ছিল।

দশ ফুটেরও কম দূরত্বে দাঁড়িয়ে থাকা কোতারোর বরফের মতো নীল চোখ অবিশ্বাসের বিস্ময়ে বিস্ফারিত হয়ে উঠেছিল। সে কোনভাবেই কিওকোকে আহাত হতে দেখতে চাইছিল না, কিন্তু তা যাতে না হয় তার জন্য তার কিছু করারও ছিল না। তার দুই বাহুই যুদ্ধের রক্তে সিক্ত ছিল এবং তার পা দুটোও খুব একটা ভাল অবস্থায় ছিল না। তার নিজের ব্যথায় এই মুহূর্তে সে এতটাই কাতর ছিল যে স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে থাকতেও তার কষ্ট হচ্ছিল, আক্রমণ করার মত শক্তি তো তার ছিল না। সে সবচেয়ে বেশি যে মেয়েটিকে ভালবাসত তার জন্য তার মন ভয়ে পাথর হয়ে গেছিল।

"ওর যেন এতটুকু আঘাত না লাগে, হায়াকুহেই, তাহলে আমি তোকে নরক থেকে টেনে বের করে আনব," কোতারে তার ধরা গলায়, তার বিষদাঁত বের করে, তার বরফের মতো নীল চোখে প্রতিশোধের আগুন জ্বালিয়ে নিয়ে কথাগুলো বলেছিল। তার চারপাশের বায়ুও যেন প্রতিশোধের আগুনের উষ্ণতা পেয়ে প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছিল, তার শক্তি-প্রবাহের ফলে তার চারিপাশের ধ্বংসাবশেষ একটা বৃত্ত তৈরি করে উড়ছিল।

কামুই ভয় পেয়ে গেছিল এবং কিওকোকে হায়াকুহেইয়ের বাহু-পাশে ছটফট করতে দেখে তার মস্তিস্কে তালা গেলে গেছিল। তার চোখে বহুবর্ণের ধূলিকণা ক্রোধের আগুনে চিকচিক করছিল। কোন পরিণামের কথা না ভেবেই, কামুই তার দুই পাঞ্জা প্রসারিত করে হায়াকুহেইয়ের দিকে ছুটে গেছিল, ঋত্বিকার জন্য তার ভালবাসা থেকে উদ্ভুত সেই অকল্পনীয় শক্তিকে সবাই প্রত্যক্ষ করেছিল।

হায়াকুহেইয়ের ছায়া দৈত্যেরা, তার শরীরকে নিরেট ধ্বংসাবশেষের মধ্যে আছড়ে, নোংরা উড়িয়ে, তাকে পিছু হঠতে বাধ্য করেছিল।

কেয়েন, যে লড়াই চলাকালীন পুরো সময় ধরে সর্বকনিষ্ঠ রক্ষককে চোখে-চোখে রাখছিল, শক্ত হাতে কামুইকে তাদের থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিল এবং তার দু’পায়ের চলনে আগুন উড়ছিল। নিস্তেজ কামুইকে বাঁচিয়ে নিয়ে মাটিতে শুইয়ে দিয়ে কেয়েন আগুন-ঝড়ানো চোখে হায়াকুহেইয়ের দিকে তাকাল এবং সর্বকনিষ্ঠ রক্ষক ও তার বিপদের মাঝখানে এসে দাঁড়াল।

সুকি তখনও তার বাবাকে দু’হাতে ধরে হাঁটুগেড়ে মাটিতে বসে ছিল। তার শরীর এখন নিথর এবং সেনিমকে হত্যার জন্য হায়াকুহেইয়ের প্রতি তার ঘৃণা সুকির অন্তঃকরণে টগবগ করে ফুটছিল। সুকির চোখ এইবার কিওকোর উপর এসে স্থির হয়ে গেছিল। সে তার সবচেয়ে ভাল বান্ধবীকে সেই নিয়তির হাত থেকে রক্ষা করতে চাইছিল যা তার বাবার মতো বুদ্ধমান বৃদ্ধকে শেষ করে দিয়েছিল।

Ваша оценка очень важна

0
Шрифт
Фон

Помогите Вашим друзьям узнать о библиотеке

Скачать книгу

Если нет возможности читать онлайн, скачайте книгу файлом для электронной книжки и читайте офлайн.

fb2.zip txt txt.zip rtf.zip a4.pdf a6.pdf mobi.prc epub ios.epub fb3

Популярные книги автора